চন্দ্রমল্লিকার পরিচর্যা | Chrysanthemum plant care
শীতকালীন মৌসুমী ফুলের মধ্যে চন্দ্রমল্লিকাও বেশ জনপ্রিয়। ক্রিসমাসের সময় ফোটে বলে একে ক্রিসেন্থিমামও (Chrysanthemum) বলা হয়। এটি বিভিন্ন বর্ণ ও রঙের হয়ে থাকে। তাই একে ‘শরৎ রানি’ও বলা হয়। বাড়ির আঙিনা, বারান্দা ও ছাদে চন্দ্রমল্লিকা ফুল চাষ করা যায়।
চন্দ্রমল্লিকা তুলনামূলকভাবে ঠান্ডা আবহাওয়া এবং রৌদ্রোজ্জ্বল জায়গায় ভালো জন্মে।
যারা গাছ ভালোবাসেন এবং নিজের বাগানে চন্দ্রমল্লিকা চাষ করতে চান, তাদের জন্য সহজ ভাষায় প্রতিটি বিষয় ব্যাখ্যা করা হলো।
চন্দ্রমল্লিকা হলো শীতকালীন ফুল। এটি দেখতে খুবই সুন্দর এবং বিভিন্ন রঙের। আপনি যদি বাগানে সৌন্দর্য চান, তাহলে এই গাছ অবশ্যই আপনাদের সুন্দর বাগানে যোগ করতে পারেন ৷
এই গাছের পরিচর্যা তুলনামূলকভাবে সহজ ।
দেরিতে চন্দ্রমল্লিকা লাগিয়ে খুবই তাড়াতাড়ি গাছ বড়ো করতে এবং তাড়াতাড়ি ফুল পেতে হলে আমাদের রাসায়নিক সার(Chemical Fertilizers) ব্যবহার করতে হবে , কারণ রাসায়নিক সারের সঠিক প্রয়োগে গাছ দ্রুত বৃদ্ধি পায়, সবুজ সতেজ থাকে এবং গাছের সামগ্রিক স্বাস্থ্য ভালো হয় (নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করে প্রয়োগ করলে ভালো ফলাফল পাওয়া যায় )।
জৈব সার (Organic Fertilizers)ধীর গতিতে কাজ করে কিন্তু এতে গাছ এবং মাটি দুটোই ভালো থাকে।
এখানে আমরা আজ শুধু রাসায়নিক সার(Chemical Fertilizers) সম্মন্ধে জানবো
মাটির প্রস্তুতি এবং সার প্রয়োগ
চন্দ্রমল্লিকা গাছ সুস্থ ও সুন্দর রাখতে মাটির মান খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সঠিক মাটি এবং সার ব্যবহার করলে গাছ ভালো ফুল দেবে এবং ফুলের রঙ উজ্জ্বল হবে। নিচে ধাপে ধাপে মাটির প্রস্তুতি এবং সার প্রয়োগের বিস্তারিত দেয়া হলো
১)চন্দ্রমল্লিকা চাষের জন্য দোআঁশ মাটি বা বেলে-দোআঁশ মাটি সবচেয়ে উপযুক্ত। মাটির জল নিষ্কাশনের ক্ষমতা ভালো হওয়া প্রয়োজন ।
২)মাটির পিএইচ মান ৬-৭ এর মধ্যে হলে চন্দ্রমল্লিকা ভালো জন্মাবে। খুব অম্লীয় বা ক্ষারীয় মাটি হলে এতে জৈব সার মেশাতে হবে।
মাটির প্রস্তুতি
১)মাটি ভালোভাবে নরম ও ঝুরঝুরে করে নিন। এতে শিকড় সহজে ছড়াতে পারবে।
২)মাটিতে (আন্দাজ মতো ) ২০-২৫% জৈব সার (গোবর সার, ভার্মি কম্পোস্ট, বা পাতা পচা সার) মিশিয়ে দিন।
৩)মাটিতে অতিরিক্ত জল জমে না থাকার জন্য প্রয়োজনে বালি মেশান।
সারের প্রয়োগ পদ্ধতি(রাসায়নিক সার)
১) বৃদ্ধি পর্যায় (চারা বড় হওয়ার সময়)
ডি এ পি (Diammonium Phosphate)
এতে ১৮% নাইট্রোজেন এবং ৪৬% ফসফেট থাকে।এটি গাছের শিকড়ের ও ডালপালার বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।এটি ৮-১০ দিন অন্তর ব্যবহার করাই ভালো (বেশি ব্যবহারে মাটি অ্যাসিডিক হতে পারে)।
ইউরিয়া (Urea)
এতে ৪৬% নাইট্রোজেন থাকে । ঘরোয়া বাগানের জন্য নাইট্রোজেনের রাসায়নিক উৎস কার্যকরী এবং সহজলভ্য। এটি ব্যবহার করলে গাছ দ্রুত বৃদ্ধি পায় এবং সবুজ সতেজ থাকে। তবে সঠিক পরিমাণে এবং সঠিক পদ্ধতিতে প্রয়োগ করতে হবে।
ব্যবহার পদ্ধতি
১)সরাসরি গাছের গোড়ায় না দিয়ে চারপাশে মাটিতে ছড়িয়ে দিন ।
২)ইউরিয়া জলে মিশিয়ে পাতলা দ্রবণ তৈরি করুন এবং স্প্রে করুন।
এটি ১৫-২০ দিন অন্তর প্রয়োগ করুন এবং ফুল ফোটার সময় (গাছে কড়ি এলে) ব্যবহার এড়িয়ে চলুন।
বাগানের গাছে কী আমরা DAP এবং ইউরিয়া(Urea)দুটোই একসংঙ্গে ব্যবহার করতে পারি?
২) কুঁড়ি আসার সময় (ফুল ধরার প্রস্তুতি)
পটাশ
এই রাসায়নিক সার ফুলের রঙ উজ্জ্বল এবং আকৃতি সুন্দর করতে সাহায্য করে। মিউরিয়েট অফ পটাশ (MOP) প্রয়োগ করুন। এটি ক্লোরাইডযুক্ত সার, তাই অতিরিক্ত ব্যবহারে মাটির লবণাক্ততা বাড়তে পারে।
যদি মিউরিয়েট অফ পটাশ না পাওয়া যায়, তবে পটাশিয়াম সালফেট (SOP) ব্যবহার করা যেতে পারে, যা ক্লোরাইড-মুক্ত এবং বাগানের জন্য আরও ভালো।
প্রতি ১৮-২০ দিন অন্তর প্রয়োগ করুন।
সতর্কতা
১) অতিরিক্ত নাইট্রোজেন প্রয়োগে গাছের শিকড় বা পাতা পুড়ে যেতে পারে ও গাছ দুর্বল হয়ে পড়তে পারে।
২) রাসায়নিক সার দ্রুত কাজ করে, তাই ছোট বা বড়ো গাছের জন্য অল্প পরিমাণ ব্যবহার করুন।
৩) যেকোনো রাসায়নিক সার(Chemical Fertilizers) সরাসরি গাছের গোড়ায় না দিয়ে চারপাশে মাটিতে ছড়িয়ে দিন এবং সার প্রয়োগের পরপরই গাছে জল দিন।
৪) সকালে বা সন্ধ্যায় সার প্রয়োগ করুন।
দ্রুত ফলাফল চাইলে: রাসায়নিক সার ব্যবহার করুন।
মাটির দীর্ঘমেয়াদি উন্নতি চাইলে: জৈব সার ব্যবহার করুন।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন